Saturday, February 29, 2020

মোদীর মাথায় হাত বুলিয়ে বাণিজ্য করে গেলেন ট্রাম্প। কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেল প্রায় শতাধিক কোটি টাকা খরচ করে ট্রাম্প পূজার নৈবেদ্য সাজিয়ে ভারতের লাভ ঠিক কতটা হলো? যদি ভারতের আমজনতার কথা ভেবে ট্রাম্পের এই সফরকে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে বলতে হবে উগ্র দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের আড়ালে ধর্মীয় ফ্যাসিস্ত রাজনীতি লাভবান হলেও প্রকৃত ভারতের কোনও লাভ হয়নি। এই মুহূর্তে ভারতের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থনীতির পতন। শি‍‌ল্পে উৎপাদন হ্রাস সবদিক থেকে সাধারণ মানুষের জীবনে সঙ্কট ডেকে এনেছে। শি‍‌ল্পোৎপাদন কমছে। ফলে কারখানায় উদ্বৃত্ত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে। বাজারে পণ্যের চাহিদা নেই। মানুষের রোজগার নেই, হাতে পয়সা, নতুন বিনিয়োগ বন্ধ। চালু কারখানা বন্ধ করতে হচ্ছে বা উৎপাদন কমাতে হচ্ছে। ফলে একই সঙ্গে কমছে কর্মী ও মজুরি। বেকারে ছেয়ে যাচ্ছে দেশ। কৃষির ধারাবাহিক সঙ্কট গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত ধসিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি কমে গেছে রপ্তানি। এমন একটা সময় জরুরি ছিল বিনিয়োগ বাড়ানো, রপ্তানি বাড়ানো, ট্রাম্পের কাছ থেকে তেমন প্রতিশ্রুতি আদায় করা যায়নি। আমেরিকায় রপ্তানি বাড়ানোর জন্য দরকার বাণিজ্য চুক্তি। কিন্তু ট্রাম্প সেই প্রসঙ্গ পুরোপুরি এড়িয়ে গেলেন। প্রসঙ্গত ভারতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি কর চাপিয়ে ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছেন। উলটে চাপ দিচ্ছে ভারতে মার্কিন‍‌ পণ্যের কর কমাবার যাতে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি ভারতে বাড়ে। তেমনি মার্কিন পুঁজি ভারতে বিনিয়োগের প্রশ্নেও ট্রাম্প নীরবই থেকেছেন। বরং ভারতের শিল্পপতিদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি আমেরিকায় পুঁজি ঢালার জন্য ভারতীয় শিল্পপতিদের নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। তেমনি টেলিকম ক্ষেত্রে ফাইভ জি প্রযুক্তি চালুর প্রশ্নে কৌশলে চীনকে গুরুত্ব না দেবার জন্য পরোক্ষ চাপ দিয়েছেন। বর্তমানে নতুন এই প্রযুক্তিতে সবচেয়ে উন্নত চীন। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি বাজার চীনের হাতে। চীনকে কোণঠাসা করবার জন্য গত এক বছর ধরে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। ভারতকে দলে টানার চেষ্টা চলছে। চীনকে বাদ দিলে অনেক কম টাকায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হবে ভারত। এই দুঃসময়ে আর্থিক চাপ বাড়বে পশ্চিমী দুনিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করলে। ফাঁদে ফেলে টেলিকম ক্ষেত্রে সঙ্কটকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায় আমেরিকা। এবিষয়ে সন্দেহ নেই চীনের কারণে কমদামের স্মার্টফোন অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়েছে ভারতের সর্বত্র। মার্কিন চাপে চীনকে দূরে সরালে আগামীদিনে ফাইভ জি প্রযুক্তিতে দ্রুত বিকাশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে ভারতের। তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে ট্রাম্প জমি তৈরি করে গেছেন। ভারতের তেল সংস্থার সঙ্গে মার্কিন তেল সংস্থার যৌথ উদ্যোগ হবে ভারতের তৈল ক্ষেত্রে মার্কিন প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে। ইতিমধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চ‍‌‍‌লে যুদ্ধ-সংঘাত লাগিয়ে দিয়ে, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধোন্মাদনা জাগিয়ে ভারতকে কার্যত বাধ্য করা হয়েছে আমেরিকা থেকে বেশি দামে তেল কিনতে। গত দু’বছরে ট্রাম্প মোদীকে দিয়ে আমেরিকা থেকে ভারতের তেল আমদানি দশগুণ বাড়িয়ে নিয়েছেন। আমেরিকা এখন ভারতের তেল আমদানির ৬ষ্ঠ বৃহত্তম উৎস। তেমনি ভারত আমেরিকার তেলের চতুর্থ বৃহত্তম গন্তব্য। মার্কিন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির বৃদ্ধির জমিও তৈরি করে গেছেন ট্রাম্প। আর হাতে গরম বাণিজ্য বলতে ৩০০ কোটি ডলারের যুদ্ধ হেলিকপ্টার বিক্রির চুক্তি হয়েছে। অবশ্য এটা এমনি এমনি হয়নি। ভারতের সঙ্গে সামরিক-স্ট্র্যাটিজিক সম্পর্ক ন্যাটো সদস্যের জায়গায় উন্নীত করার শর্তে এগুলির বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থাৎ ভারতে প্রতিরক্ষা ও বিদেশনীতি সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে। সহজ কথায় আমেরিকা-চীনের সম্পর্কের গভীর ছা‌য়া পড়বে চীন-ভারতের সম্পর্কের। আসলে মোদীরা দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ, শক্তিশালী যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রনীতিতে বেশি আগ্রহী, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, সুখ-শান্তি-স্বস্তি তাদের কাছে গুরুত্বহীন। তাই সামরিক-স্ট্র্যাটেজি বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীরা বেশি মেতেছিলেন। অর্থনীতি পড়েছিল সাইড লাইনের বাইরে।

অর্থনীতি পার্শ্বরেখার বাইরে - Ganashakti Bengali